বেশি সাদা-সিধা হওয়া ভালো নয়

বেশি সাদা-সিধা হওয়া ভালো নয়। কিন্তু ইচ্ছা ক’রে চালাকও তো হওয়া যায় না। বিশেষ ক’রে যেখানে ভালোবাসা, ভক্তি বা আবেগ থাকে, সেখানে চালাক হতে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। সেখানে ‘কড়ি লবে গুনে, পথ চলবে জেনে’—এই উপদেশ স্মরণে থাকে না।

ছাত্র জীবনে একবার সাথীদেরকে নিয়ে ২৫ পয়সা গ্লাস শুনে ঠান্ডা পানি কিনে খেতে গিয়ে ১ টাকা ২৫ পয়সা গ্লাস দরে দাম মিটাতে হয়েছে।
একবার লিচু কিনতে গিয়ে ১৪ টাকা কেজি শুনে ১৪ টাকা পাও (এক পোয়া বা ২৫০ গ্রাম) এর দর গুনতে হয়েছে।
না ঝগড়া করেও লাভ হয়নি। গত শুক্রবারে মক্কার ইব্রাহীম খলীল রোডেও ঝগড়া ক’রে লাভ করতে পারিনি। ১৮০ রিয়াল স্বর্ণের গ্রাম শুনে ২০৫ রিয়াল গ্রাম হিসাব জুড়ে আমাকে টুপী পরিয়েছে!
খুব বেশি না, হাজার রিয়ালের কাছাকাছি। অবশ্য সোনার ওজন এবং মানও পরীক্ষণীয়।
শুনেছিলাম মক্কায় চোর আছে, পকেটমার আছে। দেখেছিও বহু হাজী বা মু’তামিরকে সর্বস্বান্ত হয়ে দেশে ফিরতে। কিন্তু আমি এই ৩৩ বছর পরে মক্কায় সোনার দোকানের ডাকাতদের কাছে লুণ্ঠিত হলাম।
ইন শাআল্লাহ কিয়ামতে পাব। আর আশা করব, তাদের হারামের টাকা যেন তাদের হাসপাতালে যায়; মানুষ-হাসপাতালে অথবা গাড়ি-হাসপাতালে।
মদীনা ইউনিভার্সিটির আমাদের হাদীসের উস্তাদ প্রায় সময় আফসোস ক’রে বলতেন।

كم من أهل مكة ليسوا من أهلها ، وكم من أهل المدينة ليسوا من أهلها……

অর্থাৎ, কত মক্কা-মদীনাবাসী, সেখানকার বাসিন্দা হওয়ার যোগ্য নয়।

তিনি বলতেন, ‘মক্কায় এমন অনেক লোক আছে, যারা সারা জীবনে ঐ কালো ঘরটাকে স্বচক্ষে দেখেনি।’
অনেকে তওয়াফ চলাকালে পকেটমারি চালায়! তবে সবাই যে মক্কাবাসী, তা অবশ্যই নয়।
হ্যাঁ, আর এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অহীর যুগেই সমাজ-বিরোধী ছিল। তবে এখন কেন থাকতে পারে না?
আল্লাহর হারামে হারাম শরীফের পাশে বাস করে বলেই কি তারা ‘হারাম’ খাবে না? তার গ্যারান্টি কে দিয়েছে? তাদের জগৎ যে আলাদা। অবশ্যই প্রশাসনের সহযোগিতা নিতে পারলে ইনসাফ পাবেন।
কিন্তু ঝামেলা পইতে হবে, সময় ব্যয় হবে, সাক্ষী-সবুত পেশ করতে হবে ইত্যাদি। এই জন্যই অধিকাংশ হাজী সেদিকে যায় না। তাতে আবার তাদের অধিকাংশই দুর্বল ও ভাষার ব্যাপারে মিসকীন।
আমাদের দেশে কেউ লুণ্ঠিত হলে বলা হয়, ‘তোকে খেতে করবে না রে!’ অর্থাৎ ঐ মারা টাকা তুই খেতে বা উপভোগ করতে পাবি না। চোরের মাল বাটপাড়ে খায়। ইত্যাদি।
আর দেশের কোন কোন লোকাল বাসের ভিতরে লেখা থাকতে দেখেছি,

ফাঁকি দিলে ফাঁকে পড়ে,
মারা টাকা যায় ডাক্তার-ঘরে।

অবশ্য মহা দিনে বিচার তো আছেই। মহানবী ﷺ একদা সূর্য-গ্রহণের নামায পড়ার সময় জাহান্নামে এক মাথা বাঁকানো লাঠি-ওয়ালাকেও দেখেছিলেন, সে তার নাড়িভুঁড়ি টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে; যে তার ঐ লাঠি দিয়ে হাজীদের সামান চুরি করত। লাঠির ঐ বাঁক দিয়ে সামান টেনে নিত। অতঃপর কেউ তা টের পেলে বলত, আমার লাঠিতে আপনা-আপনিই ফেঁসে গেছে, আর কেউ টের না পেলে সামানটি নিয়ে চলে যেত। (মুসলিম ২১৪০নং)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *