প্রচলিত প্রবাদ আছে,
‘ধানের মধ্যে ঝোড়া, মানুষের মধ্যে গেঁড়া।’
ধানের মধ্যে ঝোড়া বা উড়ি যেমন অযাচিত ও ক্ষতিকর, তেমনি মানুষের মধ্যে গেঁড়া মানুষকে দুষ্ট ও প্যাঁচালো মনে করা হয়। বলা হয়, ‘বেঁটের বুদ্ধি গেঁটে গেঁটে।’ কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এ কথা সঠিক নাও হতে পারে।
অনেকে আবার গেঁড়া মুসলমানকে বদমাশ মনে করে। বলা হয়, ‘কালো বামন কটা শুদ্র বেঁটে মুসলমান, ঘর জামাই পোষ্যপুত্র পাঁচজনাই সমান।’ এ তো আরো অবাক করার মতো কথা।
যেমন ‘কানা খোঁড়া বদের গোঁড়া বদের নাহি অন্ত, তাদের চেয়ে বেশী যার দাঁতের উপর দন্ত’ কথাও সবার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা ঠিক নয়।
বলা হয়, ‘মেয়ে লোকের এমনি স্বভাব, হাজার দিলেও যায় না অভাব।’ কিন্তু সব মেয়ে লোক একাকার নয়।
‘পুরুষ জাতটাই এমন, মেয়েদেরকে দাসী বানিয়ে রাখে।’ কিন্তু সব পুরুষ এক রকম নয়।
বলা হয়, ‘মৌলবীরাই দেশটাকে মাটি করল, মৌলবীরা মেয়ে-লোভী অথবা মৌলবীরা পেটুক হয়।’ যেমন সঊদী আরবে বলা হয়, ‘কুল্লু মুত্বাওয়া খারবান।’ (প্রত্যেক দাড়ি-ওয়ালা খারাপ।) অথচ এমন ঢালাও কথা ন্যায্য কথা নয়।
আমাদের এলাকায় একটি গ্রাম আছে, তার নামে একটি কথা প্রচলিত আছে, ‘তাড়ি নারী খেজুর গুড়, এ তিন নিয়ে ওয়ারিস পুর।’ কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ওয়ারিস পুর গ্রামের সকল লোকেরাই এ তিনে জড়িত থাকে।
সঊদী আরবে অনেক সঊদীর মুখে অনেকে শুনে থাকবেন, ‘কুল্লু বাঙ্গালী খারবান।’ (প্রত্যেক বাঙ্গালী খারাপ।) অথচ এটা হক কথা নয়।
অনুরূপ মিসরী, হিন্দী, পাকিস্তানী বা বিহারী মাত্রই সবাই খারাপ হতে পারে না।
কেউ বলতে পারেন, ‘লিল আকষারি হুকমুল কুল।’ অর্থাৎ, সংখ্যাগরিষ্ঠতা সাকল্যের মান পায়।
কিন্তু মান হয়তো পায়, তবে বাস্তব বদলে না। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যে পার্টি সরকার গড়ে, সারা দেশের সকল লোক কিন্তু সেই পার্টির নয়।
অনেক সময় মানুষ, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নয়, বরং দু-চারজন লোকের দোষ ধরে গোটা গ্রামের বা দেশের বদনাম করে। গ্রামের দু-চারটি লোক চোর থাকলে সে গ্রামকে ‘চোর গাঁ’ বলা হয়ে থাকে। এটা ভারী অন্যায়।
যাই হোক, অভিজ্ঞতায় আধিক্য প্রমাণিত হয়েছে অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মানুষের মধ্যে নির্দিষ্ট দোষ দেখে প্রবাদ প্রচলিত হয়েছে। যা সকলের ক্ষেত্রে ঠিক হবে, এ কথা সুনিশ্চিত নয়।
(মানবের উপমান অমানব)
আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী)