একটি ভাত টিপলে হাঁড়িসুদ্ধ ভাতের খবর মেলে

আরো একটি প্রবাদ প্রসিদ্ধ আছে,

‘একটি ভাত টিপলে হাঁড়িসুদ্ধ ভাতের খবর মেলে।’ কোন একজনকে দেখে অন্যান্য সমপর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে অনুমান করা যায়।

কিন্তু কোন দল বা জাতির ক্ষেত্রে এমন প্রবাদ ভুল। দল বা জাতির ক্ষেত্রে একটা মানুষকে পরীক্ষা ক’রে গোটা দল বা জাতির মান নির্ণয় করা বোকা মানুষের কাজ। হাঁড়িতে যদি বাসমতি, স্বর্ণ ও ছত্রিশ চাল থাকে, তাহলে কি সম্ভব একটি ভাত টিপে দেখে গোটা হাঁড়ির ভাতের খবর নেওয়া? একটি জাতির মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণী, বিভিন্ন মনের, বিভিন্ন চরিত্রের মানুষ থাকে। সেই জাতির দু-একটা লোকের দুর্ব্যবহার দেখে কি সমগ্র জাতিকে ‘অভদ্র’ আখ্যায়ন করা যায়?

এক পন্ডিতের বইয়ে একটি (হিন্দী প্রবাদ) পড়লাম, ‘মুসলমান বেইমান।’

অনেক অমুসলিম লেখক বা বক্তা স্বজাতির কারো অসদাচরণ উল্লেখ করার সময় ‘মামদোবাজি’ শব্দ ব্যবহার ক’রে থাকেন। তাঁরা আদৌ ন্যায়পরায়ণ নন। তাঁদের অভিজ্ঞতায় অথবা শ্রুত বা পঠিত জ্ঞানে কোন মুসলিম ব্যক্তির চরিত্রে কোন অন্যায়াচরণ পরিলক্ষিত হলে, তা সমগ্র মুসলিম জাতির হতে পারে না। দু-একজনের মতো সকলকে ধারণা করা কোন জ্ঞানীর কাজ হতে পারে না। নিশ্চয় তিনি জ্ঞানী হলে অপর সকলকে জ্ঞানী ধারণা করা তাঁর জ্ঞানবত্তা নয়।

বলবেন, গ্রামে দু-চারজন চোর থাকলে সেই গ্রামকে ‘চোর-গ্রাম’ বলা হয়।

তাহলে জনতার কাছে এর জবাব শুনুন। এক গ্রামে বরযাত্রীদের একজনের জুতো চুরি হয়ে গেলে, সে বলেছিল, ‘এ গ্রামটা চোর-গ্রাম।’

গ্রামের যুবকেরা উত্তেজিত হয়ে বলল, ‘তাহলে আমরা সবাই চোর?’ অতঃপর শুরু হয়ে গেল গণধোলাই।

সুতরাং জনতার বিচারে এমন বলাটা অন্যায়। একজনের দোষে সবাইকে দোষী করা অন্যায়। সে কথা খেয়াল রেখেই কথা বলতে হয়, শব্দ প্রয়োগ করতে হয় জ্ঞানীদেরকে।

বড় দুঃখের বিষয় যে, এই শ্রেণীর বিশ্বাস নিয়ে অনেকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অন্তরে বিষ পোষণ করে। আর যথা সময়ে ভোট বা নোটের স্বার্থে তা উদগার করে। কিছু মানুষের জন্য অজ্ঞানীরা সমগ্র জাতির বদনাম করে। জাতির সকলকেই একাকার ধারণা করে। ফলে একজনের প্রতিশোধ নিতে জাতির অনেকজনকে অথবা অপরাধীর প্রতিশোধ নিতে নিরপরাধ মানুষকে আঘাত করে। যা জঘন্য অন্যায়।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

((أعْظَمُ النّاسِ فِرْيَةً اثْنانِ شاعرٌ يَهْجُو القَبِيلَةَ بأسْرِها ورَجُلٌ انْتَفَى مِنْ أبِيهِ))।

অর্থাৎ, সবচেয়ে বড় মিথ্যারোপকারী লোক দুই ব্যক্তিঃ (ব্যঙ্গ-কাব্যের) এমন কবি, যে গোটা গোত্রের দোষ বর্ণনা করে এবং সেই ব্যক্তি, যে নিজের পিতাকে অস্বীকার করে। (সঃ জামে’ ১০৬৬নং)

(মানবের উপমান অমানব)

আব্দুল হামীদ আল-ফাইযী আল-মাদানী)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *