ধীরে ধীরে জীবনের ছায়া পূর্ব দিকে ঢলে পড়ছে। হয়তো বা কোন দিন প্রাণ-সূর্য অস্তমিত হবে। যাবার আগে তোমাদেরকে কিছু দিয়ে যেতে পারব না। তাই ‘জীবন-দর্পণ’-এর কিছু প্রতিবিম্ব তোমাদেরকে উপহার দিয়ে গেলাম। কতভাবে শিখলাম, দেখে শিখলাম, লেখে শিখলাম, ঠকে শিখলাম। শেখারও কি কোন শেষ আছে বলছ?
মানুষের সাথে ব্যবহারে কত অভিজ্ঞতা হল। স্বদেশী-বিদেশী কত মানুষের সাথে আলাপ হল, স্বভাষী-বিভাষী কত মানুষের সাথে ভালোবাসা ও শত্রুতা হল, আর তাতে যে কত শিক্ষা পেলাম, তারও কিছু কিছু উত্তাপ থাকবে এই পুস্তিকায়।
জীবনের চাওয়া-পাওয়ার দোদুল্যমান খেলা, আশা-নিরাশার আলো-
আঁধারের ছিনিমিনি, ভক্তি ও ঘৃণার ফুল ও পাথরের ঘাত-প্রতিঘাত জীবনকে কখনও সমৃদ্ধ করেছে, কখনও করেছে মলিন। হাসি-কান্নার অশ্রুধারায় জীবন কখনও হয়েছে পরিপ্লুত। উত্থান-পতনের টানাপোড়েনে জীবন কখনও হয়েছে ফুল-বিষময়। টক-ঝাল-মিষ্টির পরিবর্তনশীল স্বাদে পরিপূর্ণ এ জীবন কখনও হয়েছে আনন্দ ও নিরানন্দময়।
বিচিত্র এ জীবন। জীবনে অনেক কিছু পেয়েছি। অসম্ভব আশার ফুলকুঁড়িও প্রস্ফুটিত হয়েছে জীবন-বাগিচায়। তবুও বলব, অনেক কিছু পাইনি। জীবনের অনেক পাওয়া হতে বঞ্চিত আমি। সে বঞ্চনা যেন পরকালে না থাকে, সেই কামনাই করি।
যারা সমাজের কোন দায়িত্ব নিয়ে কালাতিপাত করে, তারা জানে কিংবদন্তি শরাঘাতের বিষময় জ্বালা। যারা সমাজে খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা লাভ করে, তারা জানে তাদের প্রতি হিংসুকদের বিষাক্ত ছোবল-যন্ত্রণা, বিরোধীদের অপবাদ ও অপপ্রচারের ঘাত-অভিঘাত।
এখনও দিন পড়ে আছে হয়তো-বা। মানুষ বৃদ্ধ হলে সম্মানী হয়, কিন্তু এ কথাও সত্য যে, মহা লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার মহাকালই হল বৃদ্ধকাল। মহান আল্লাহ যেন তা হতে রক্ষা করেন আমাকে।
জানি না আমি কাকে কী দিতে পেরেছি আমার জীবনে। উপকার করতে পেরেছি কার কী? মনে হয় যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় জীবনের সব কিছু তেমনই আছে, যেমন ছিল আমার আসার পূর্বে। আর তার মানে আমি কাউকে কিছু দিতে পারিনি।
তাই উপহার দেব ভেবে গাঁথলাম এই মুক্তার মালা। মুক্তা আমার নয়, সব কুড়িয়ে পাওয়া, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা মুক্তা-দানা। আমি কেবল আমার দুর্বল সুতো দ্বারা সযত্নে গেঁথে তোমার হাতে তুলে দিলাম।
প্রিয় বন্ধু! তুমি সাদরে তা গ্রহণ ক’রে নিজ কণ্ঠে পরিধান করো, তারপর ‘জীবন-দর্পণ’-এর সম্মুখে দাঁড়িয়ে দেখো, আমার চোখে তুমি অপরূপা মুক্তারানী হবে। পুরুষ বলে তা কঠে পরিধান না করলে তুমি তোমার মনের মণিকোঠায় তুলে রেখো। দেখবে তোমার সে কোঠা ঝলমলে আলোয় আলোক-দীপ্ত হবে।
আমি অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে দেখব, যদি তোমাকে অপরূপা লাগে অথবা তোমার কোঠা আলো ঝিলিমিলি করে, আমার বারি-সিঞ্চনে পৃথিবীর কোন উদ্যান যদি ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়, আমার এই উপহার নিয়ে যদি কেউ প্রকৃত সুখের সন্ধান পায় অথবা চিরসুখী হওয়ার পথের সন্ধান পায়, তাহলে সেই দেখায় আমার চক্ষু শীতল হবে, আমার মনে খুশির জোয়ার আসবে।
আমি বঞ্চিত হলেও তোমার জন্য সঞ্চিত ক’রে গেলাম সুখের সামগ্রী। তুমি চিরসুখী-চিরসুখিনী হয়ো বন্ধু! বিনিময়ে আমাকে ‘দুআ’ দিয়ো, যাতে আমি পরকালে চিরসুখের বাগান পাই।
আত্মশুদ্ধি ও আমল
জীবন দর্পণ
এ লেখাটি জীবনের নানা অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম ও দুঃখ-সুখের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে। লেখক নিজের জীবনের চাওয়া-পাওয়া, উত্থান-পতন, হাসি-কান্না ও খ্যাতি-অখ্যাতির মধ্যে যে শিক্ষা অর্জন করেছেন, তা পাঠকের সাথে শেয়ার করেছেন। তিনি জীবনের অস্থিরতা ও নিরানন্দের মাঝে আশা ও নির্ভরতার দিকগুলো তুলে ধরেছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে লেখক নিজের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বন্ধুদের জন্য সুখের পথ দেখানোর চেষ্টা করেছেন এবং তাঁদের জন্য প্রার্থনা করেছেন। এটি এক ধরনের উপহার, যা তিনি নিজের দুর্বলতা সত্ত্বেও তাঁদের হাতে তুলে দিতে চান।
Total Downloads: 0
Reviews
There are no reviews yet.